ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কি কি খাবার খেতে হবে

 ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কি কি খাবার খেতে হবে 

ডায়াবেটিস একটি স্বাস্থ্য সমস্যা যা শরীরের রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণে ঘটে। এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) রোগ এবং এর দুইটি প্রধান ধরন আছে:



১. টাইপ ১ ডায়াবেটিস

  • বিবরণ: এই ধরণের ডায়াবেটিসে, শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) ইনসুলিন উৎপাদনকারী β-সেলগুলিকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ইনসুলিনের অভাব ঘটে।
  • চিহ্ন: সাধারণত শিশু ও তরুণদের মধ্যে দেখা যায়, তবে যেকোন বয়সে হতে পারে।
  • চিকিৎসা: ইনসুলিন থেরাপি প্রয়োজনীয় এবং নিয়মিত ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন।

২. টাইপ ২ ডায়াবেটিস

  • বিবরণ: এই ধরণের ডায়াবেটিসে, শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করে, কিন্তু ইনসুলিন যথাযথভাবে কাজ করে না (ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স)। কালের পরিক্রমায় β-সেলগুলির কার্যকারিতা কমে যেতে পারে।
  • চিহ্ন: সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দেখা যায়, তবে শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও হতে পারে। সাধারণত স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ওজন বৃদ্ধি এই রোগের সাথে সম্পর্কিত।
  • চিকিৎসা: লাইফস্টাইল পরিবর্তন, ডায়েট এবং মাঝে মাঝে মৌখিক ওষুধ বা ইনসুলিন ইনজেকশন প্রয়োজন হতে পারে।

ডায়াবেটিস রোগীর খাবার তালিকাঃ 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া জরুরি। এখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাবারের তালিকা দেওয়া হলো:

    1. সবুজ শাক-সবজি: পালং শাক, মেথি, ব্রকোলি ইত্যাদি, যেগুলো ফাইবার ও পুষ্টি সমৃদ্ধ এবং কম কার্বোহাইড্রেট।

    2. ফলমূল: তবে চিনির পরিমাণ কম এমন ফলগুলি যেমন আপেল, নাশপাতি, বেরি (স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি)।

    3. পূর্ণ শস্য: ব্রাউন রাইস, কুইনোয়া, ওটস, মিষ্টি আলু ইত্যাদি, যা ধীরে ধীরে শর্করা মুক্ত করে।

    4. প্রোটিন: মাছ, মুরগির বুক, ডাল, ছোলা, ইত্যাদি, যা শরীরের জন্য ভালো প্রোটিন সরবরাহ করে।

    5. দুধের বিকল্প: লো ফ্যাট দুধ, দই, আঠা ছাড়া মিষ্টি দই, কিংবা বাদামের দুধ।

    6. নটস এবং সীডস: বাদাম, আখরোট, ফ্ল্যাকস সীড, চিয়া সীড যা ভালো ফ্যাট এবং ফাইবার সরবরাহ করে।

    7. অল্প তেলে রান্না করা খাবার: কুকিং তেল হিসেবে জলপাই তেল বা সরিষার তেল ব্যবহার করা।

    8. পানি: পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    এছাড়া, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু নিয়মও অনুসরণ করা উচিত:

    • কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: খাবারের কার্বোহাইড্রেট পরিমাণ নজরে রাখা এবং শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা।

    • বারবার ছোট খাবার খাওয়া: একসাথে বড় পরিমাণে খাবার না খেয়ে দিনে কয়েকবার ছোট ছোট খাবার খান।

    • রক্তের শর্করা পর্যবেক্ষণ: নিয়মিতভাবে রক্তের শর্করা মাপা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চলা।

ডায়াবেটিস রোগীর নিষিদ্ধ খাবার 

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কিছু খাবার রয়েছে যা শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাধা দিতে পারে এবং রোগের লক্ষণকে খারাপ করে তুলতে পারে। এগুলি সাধারণত উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (GI) থাকা খাবার যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। নিচে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যা ডায়াবেটিস রোগীরা পরিহার করা উচিত:

১. শর্করা ও চিনিযুক্ত খাবার

  • সর্বাধিক চিনিযুক্ত পানীয়: সোডা, ফলের জুস, এনার্জি ড্রিঙ্কস।
  • মিষ্টি: কেক, পেস্ট্রি, পুডিং, মিষ্টির দোকানের অন্যান্য খাবার।

২. সাদা শস্য ও সাদা আটা

  • সাদা ব্রেড: সাধারণ শ্বেত আটা থেকে তৈরি।
  • সাদা রাইস: সাদা চালে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেক্স রয়েছে।

৩. প্রক্রিয়াজাত ও রান্নায় বেশি তেল ব্যবহার করা খাবার

  • ফাস্ট ফুড: ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চিকেন নগেটস, বার্গার ইত্যাদি।
  • মুচমুচে স্ন্যাকস: চিপস, কনফেকশনারি।

৪. বিশেষ কিছু ফলমূল ও সবজি

  • উচ্চ চিনির ফলমূল: আম, আঙ্গুর, তরমুজ।
  • বিশেষ কিছু সবজি: বিশেষভাবে কন্দজাতীয় সবজি যেমন আলু, সাদা মিষ্টি আলু।

৫. ডিম ও সাদা মাংসের কিছু প্রস্তুত খাবার

  • প্রক্রিয়াজাত মাংস: সসেজ, হটডগ, কনসার্ভড মাংস।
  • অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার: বিশেষ করে অতিরিক্ত তেল ও মশলা ব্যবহার করা।

৬. হাই-ফ্যাট দুধ ও দুধের পণ্য

  • সম্পূর্ণ দুধ: উচ্চ ফ্যাটের কারণে।
  • ক্রিম ও চিজ: প্রচুর ফ্যাট এবং ক্যালোরি ধারণ করে।

৭. গবেষণায় প্রমাণিত অস্বাস্থ্যকর চর্বি

  • ট্রান্স ফ্যাট: বেকড ও প্যাকেজড খাবারে সাধারণত থাকে।

এড়িয়ে চলার কৌশল:

  1. নিয়মিতভাবে লেবেল পড়ুন: প্যাকেজড খাবারের লেবেল চেক করে তার মধ্যে চিনির পরিমাণ এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্স যাচাই করুন।
  2. স্বাস্থ্যকর বিকল্প বেছে নিন: পুরো শস্যের ব্রেড, বাদাম, ফ্রেশ ফলমূল, অল্প তেলে রান্না করা খাবার।
  3. ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শ নিন: আপনার জন্য কোন খাবার উপযুক্ত তা জানতে পেশাদার পরামর্শ নিতে পারেন।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে আপনার খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করা সর্বোত্তম পন্থা।


Post a Comment

0 Comments