ভারতের ১০ টি রাজ্যের বিখ্যাত খাবার ও দর্শনীয় স্থান
পৃথিবীর বৃহত্তম দেশ গুলোর মধ্যে ভারত একটি। ভারতে সর্বমোট ২৮ টি রাজ্য আছে। আজ আমরা ভারতের ১০ টি রাজ্য ও দর্শনীয় স্থান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো। কারন আমরা অনেকেই এই রাজ্য গুলো সম্পর্কে জানি না ,যখন আমরা সেখানে ঘুরতে যাই তখন আমাদের অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ভারতের ১০ টি রাজ্যের বিখ্যাত খাবার
ভারতের প্রতিটি রাজ্যের রয়েছে নিজস্ব স্বাদ, উপকরণ এবং রান্নার পদ্ধতি, যা দেশের খাদ্য সংস্কৃতিকে অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় করে তোলে। এখানে ভারতের ১০টি রাজ্যের বিখ্যাত খাবারগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
পাঞ্জাব (পনির টিক্কা)
- পনির টিক্কা: পনিরের বড় বড় টুকরোগুলিকে দই এবং মশলার মিশ্রণে মেরিনেট করে, পরে গ্রিল বা তাওয়া তেলে ভাজা হয়। সাধারণত হালকা তেল ও দইয়ের মিশ্রণ তৈরি হয় এবং এর সাথে একাধিক মশলা ব্যবহৃত হয়। এটির সাথে পরিবেশন করা হয় মুলতানি চাটনি বা পুদিনা চাটনি।
রাজস্থান (দাল-ভাটী)
- দাল-ভাটী: রাজস্থানের এক বিশেষ খাবার, যা মসুরের ডাল (দাল) এবং ভাটী (মুখরোচক মসলা মিশ্রিত ভাত) দিয়ে তৈরি। এটি সাধারণত গরম গরম রুটি বা বনির সাথে খাওয়া হয়।
গুজরাট (ধোসা)
- ধোসা: গুজরাটের জনপ্রিয় খাবার, যা হলুদ এবং মসলা দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং এটি সাধারণত মিষ্টি চাটনি বা তাম্বা সাসম্বারের সাথে পরিবেশন করা হয়।
মহারাষ্ট্র (পুরাণ পুলি)
- পুরাণ পুলি: এটি এক ধরনের মিষ্টি রুটি, যা ডাল ও চিনি দিয়ে পূর্ণ করা হয় এবং সাধারণত বিশেষ উপলক্ষ্যে রান্না করা হয়।
উত্তরপ্রদেশ (কেবাব)
- কেবাব: বিশেষ করে লখনউ শহরের কেবাবগুলি বিখ্যাত। এদের মধ্যে রয়েছে শাহী কেবাব, গৌরব কেবাব এবং আরও অনেক ধরনের মাংসের কেবাব যা মসলা দিয়ে মেরিনেট করা হয় এবং তাওয়াতে ভাজা হয়।
বঙ্গাল (মাছের ঝোল)
- মাছের ঝোল: পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় খাবার, যা তাজা মাছ, হলুদ, আদা, রসুন এবং মসলার মিশ্রণে তৈরি। এটি সাধারণত ভাতের সাথে পরিবেশন করা হয়।
দক্ষিণ ভারত (সাধারন দোসা)
- দোসা: এটি দক্ষিণ ভারতের বিখ্যাত খাবার, যা ধোয়া দানা (বেসন) থেকে তৈরি হয়। এটি সাধারণত মসলা বা তাম্বা সাসম্বারের সাথে পরিবেশন করা হয়।
কর্ণাটক (বেঙ্গুড়ি ভাত)
- বেঙ্গুড়ি ভাত: কর্ণাটকের একটি জনপ্রিয় খাবার, যা দই ও মসলা দিয়ে তৈরি ভাতের মিশ্রণ। এটি সাধারণত হালকা মসলা দিয়ে তৈরি এবং তাজা সবজি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।
নাগাল্যান্ড (ঝাঙা)
- ঝাঙা: এটি একটি বিশেষ ধরনের মাংসের স্টু, যা মাছ অথবা মাংসের সাথে মসলার মিশ্রণে রান্না করা হয়। এটি সাধারণত রাইসের সাথে পরিবেশন করা হয়।
কেরালা (বিরিয়ানি)
- কেরালা বিরিয়ানি: এটি কেরালার বিখ্যাত খাবার, যা সুগন্ধি চাল ও মাংসের মিশ্রণ, বিশেষ করে মুরগি বা খাসি দিয়ে তৈরি হয়। মসলার মিশ্রণ এবং নারিকেল ব্যবহার করা হয়, যা বিরিয়ানির স্বাদে একটি অনন্য প্রভাব ফেলে।
প্রত্যেক রাজ্যের খাবার তার স্থানীয় উপকরণ ও রান্নার কৌশল অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন। ভারতের খাদ্য সংস্কৃতি এতটাই বৈচিত্র্যময় যে, প্রতিটি রাজ্যেই আপনি নতুন নতুন স্বাদের মুখোমুখি হবেন।
ভারতের ১০ টি রাজ্যের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান
ভারতের প্রতিটি রাজ্যের রয়েছে অসংখ্য বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান, যা ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। এখানে ভারতের ১০টি রাজ্যের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলোর বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. উত্তরপ্রদেশ
- তাজমহল (Agra)
- বিবরণ: তাজমহল হল এক অমর প্রেমের নিদর্শন এবং বিশ্বের অন্যতম সুন্দর স্মৃতিসৌধ। এটি মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতিতে নির্মাণ করেন। সাদা মার্বেল দ্বারা তৈরি এই সৌধটির বিশেষত্ব হল এর সূক্ষ্ম কারুকার্য এবং মসৃণ পাথরের ব্যবহার। তাজমহল ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
২. রাজস্থান
- আম্বার ফোর্ট (Jaipur)
- বিবরণ: আম্বার ফোর্ট রাজস্থানের একটি ঐতিহাসিক দুর্গ, যা ১৬৭০ সালের দিকে রাজা মান সিং দ্বারা নির্মিত হয়। এর বিশাল দুর্গ, প্রাচীর, এবং চমৎকার স্থাপত্য কৌশল রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের পরিচায়ক। দুর্গের ভিতরে রয়েছে রাজকীয় প্রাসাদ, হল, এবং সুন্দর বাগান।
৩. মহারাষ্ট্র
- এলিফ্যান্টা গুহা (Mumbai)
- বিবরণ: এলিফ্যান্টা গুহা মুম্বাইয়ের উপকণ্ঠে অবস্থিত একটি প্রাচীন গুহা কমপ্লেক্স, যা হিন্দু দেবতা শিবের মূর্তিসমূহের জন্য পরিচিত। এখানে শিবের বহু মূর্তি খোদাই করা রয়েছে এবং গুহার ভিতরের শিল্পকর্ম ও স্থাপত্য শিল্পের জন্য এটি বিখ্যাত।
৪. গুজরাট
- রানকপুর জৈন মন্দির (Rankpur)
- বিবরণ: রানকপুর জৈন মন্দির গুজরাটের এক বিখ্যাত জৈন মন্দির, যা তার সুদৃশ্য স্থাপত্য এবং জটিল কারুকার্যের জন্য পরিচিত। মন্দিরটি ১৫শ শতকে নির্মিত এবং এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো হাজার হাজার সাদা মার্বেল কলাম দ্বারা নির্মিত বিশাল কক্ষ।
৫. পাঞ্জাব
- স্বর্ণমন্দির (Amritsar)
- বিবরণ: স্বর্ণমন্দির (হরমিন্দর সাহেব) শিখ ধর্মের প্রধান মন্দির, যা সোনালী গম্বুজ এবং চারপাশে জলাশয়ের জন্য পরিচিত। এটি শিখদের ধর্মীয় কেন্দ্র এবং ভক্তদের জন্য একটি পবিত্র স্থান। মন্দিরের ভিতরে রয়েছে একটি বিশাল ধর্মীয় মিলনকক্ষ, যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন।
৬. ওড়িশা
- কোনারক সান টেম্পল (Konark)
- বিবরণ: কোনারক সান টেম্পল, সূর্যদেবের মন্দির, ওড়িশার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য নিদর্শন। এটি ১৩শ শতকে নির্মিত এবং এর অসাধারণ স্থাপত্য, সূর্যদেবের বিশাল চাকা এবং ভাস্কর্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
৭. কর্ণাটক
- হাম্পি (Hampi)
- বিবরণ: হাম্পি প্রাচীন হিন্দু সাম্রাজ্যের একটি ধ্বংসাবশেষ, যা কর্ণাটকের অন্তর্গত। এখানে বেশ কিছু বিখ্যাত মন্দির, প্রাসাদ, এবং স্থাপত্য নিদর্শন রয়েছে যা বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সোনালী যুগের পরিচায়ক। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
৮. কেরালা
- আলেপ্পি (অলাপ্পুজা)
- বিবরণ: আলেপ্পি, কেরালার বিখ্যাত ব্যাকওটার অঞ্চল, হাউস-বোট এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য পরিচিত। এখানকার শান্ত জলপথে ভ্রমণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
৯. দিল্লি
- লাল কেল্লা (Red Fort)
- বিবরণ: লাল কেল্লা দিল্লির একটি ঐতিহাসিক দুর্গ, যা মুঘল সম্রাট শাহজাহান দ্বারা নির্মিত। এই দুর্গটি তার লাল মার্বেল এবং বিশাল আঙ্গিনার জন্য পরিচিত। এটি ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত এবং ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
১০. তামিলনাড়ু
- মহাবলিপুরম (Mahabalipuram)
- বিবরণ: মহাবলিপুরম তামিলনাড়ুর একটি প্রাচীন শহর, যা তার পাথরের মন্দির ও গুহার স্থাপত্যের জন্য পরিচিত। এখানে অনেকগুলো ভাস্কর্য এবং মন্দির রয়েছে, যার মধ্যে ‘প্যানচ রথ’ এবং ‘শোর টেম্পল’ উল্লেখযোগ্য। এটি ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্য স্থান।
এই স্থানগুলির প্রতিটি স্থান তার নিজস্ব ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের জন্য পরিচিত এবং পর্যটকদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
0 Comments